গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিম সালেহের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ। সে বাংলাদেশের একজন উদ্যোক্তা তরুন।
নিউইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে, ফাহিমকে হত্যা করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে তার গলা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে টুকরা টুকরা করা হয়েছে। খণ্ডিত অংশগুলো ব্যাগে ভরা ছিল।
বাংলাদেশি যে অল্প কয়েকজন তরুন উদ্যোক্তা কম সময়ে তাদের মেধা ও পরিশ্রম দ্বারা সফলতার সাক্ষর রেখেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফাহিম সালেহ।
রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাওয়ের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
তার বয়স মাত্র ৩৩ বছর। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হরিসপুরের সন্তান তিনি। বাবা আইবিএমের সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সালেহ আহমেদ।
করোনাভাইরাস মহামারীর ক্রান্তিলগ্নে তিনি পোকিস্পিতে মা-বাবার সঙ্গে ছিলেন। কয়েকদিন আগে তিনি নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন।
মংগলবার আমেরিকার সময় বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তার নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পুলিশ খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে।
Source
এখনও হত্যার রহস্য জানা যায়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি নিউজ জানিয়েছে, মুখঢাকা কেউ প্রবেশ করেছিলেন ফাহিমের ঘরে।
ফাহিম সালেহ ছিলেন একজন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী তরুণ উদ্যোক্তা ছিলেন। একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। অসাধারণ উদ্ভাবনী মেধাশক্তির অধিকারী।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অন্যতম হাতিয়ার প্রযুক্তি ভিত্তিক জীবনব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি একটি বিশেষ অবদান রেখে গেছেন পাঠাও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
তিনি ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। হাইস্কুলে পড়ার সময় ‘উইজটিন’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে বেশ অর্থ আয় করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন।
জন্ম থেকেই আমেরিকা থাকার পরে ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ২০১৫ সালে আরও দুই জন তরুন উদ্যোক্তার সঙ্গে মিলে ঢাকায় মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনের অ্যাপ ‘পাঠাও’ চালু করেন।
Source
অল্প সময়ে এই প্রযুক্তি ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা খ্যাতি লাভ করে। উবারের অন্যতম বিকল্প হিসেবে দেশী এই কোম্পানি দাড়িয়ে যায়। তা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নেপালেও সম্প্রসারিত হয়।
মেধাবী এই উদ্ভাবক শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাইড শেয়ারিং অ্যাপস কোম্পানি, ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার তৈরি ও প্রয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যা সমাধান করে আন্তর্জাতিক অংগনে ব্যাপক সাড়া জাগান।
তিনি ‘গোকান্ডা’ নামে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে নাইজেরিয়ায় লাগোসে যৌথ উদ্যোগে পাঠাও-এর মত অ্যাপভিত্তিক মোটরবাইক রাইড সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম চালু করেন।
এছাড়াও বিনোদনমূলক অ্যাপারেটাস কোম্পানি ‘কিকব্যাকের' প্রতিষ্ঠাতা এবং অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্লোবাল নামক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানেরও একজন উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি।
এই অল্প বয়সেই প্রায় ৫০ কোটি ডলার সম্পদের মালিক হয়ে যান।
এরকম একজন প্রতিভাবান উদ্যোক্তার অপমৃত্যু সত্যিই দুঃখজনক।