দুঃস্বপ্নের জন্য অপেক্ষা

in BDCommunity4 years ago

20200711_205103.jpg

‘এটা বিরক্তিকর। আমরা যেভাবে চাচ্ছি, সবকিছু সেভাবে হচ্ছে!’ সবাই ঘুরে তাকালো। ঈশা বিষন্ন স্বরে বললোঃ ‘এর মধ্যে কোন ফ্যান্টাসি নেই।‘

আমরা ঈশার পয়েন্টটা ধরার চেষ্টা করছি- ‘কি রকম ফ্যান্টাসি?’

‘এই যে, আমরা যেভাবে খেলছি- চোর পুলিশ ডাকাত। ইচ্ছেমত যে যা খুশি, সে তা-ই হয়ে যাচ্ছি। এটা একটা হাস্যকর ছেলেমানুষী খেলা।‘

‘তুমি তাহলে কি চাও?’ –শীতিন সামনের দিকে ঝুঁকে বললোঃ ‘তুমি কি খেলতে চাও না?’

ঈশা একটু কেশে গলাটা বাড়িয়ে ফিসফিস করে বললোঃ ‘চাই। কিন্তু এই খেলাটা বারবার পড়া কোন কার্টুনের বইয়ের মত নিস্তরঙ্গ, নিরস। আমি চাই খেলাটায় প্রাণ থাকুক।‘

আমি আরও নিশ্চিত হতে চাইলামঃ ‘কি রকম?‘

‘ধরো- সাল্লু রাজা হলো, সে রাজাই থাকবে। রবিন যদি দস্যু হয়, সে শেষপর্যন্ত দস্যুই থাকবে। চাইলেও চরিত্রগুলো মুহূর্তে বদলে যেতে পারবে না।‘

‘কিন্তু আমি দস্যু হতে চাই না।‘ –রবিন ফুঁপিয়ে উঠলো। জেবা অবিশ্বাসের সুরে জিজ্ঞাসা করলোঃ ‘তুমি কি এমন কিছু চাও, যাতে কিনা খেলায় বিশৃঙ্খলা হবে?’

ঈশা এবার দৃঢ় কন্ঠে উত্তর দিলোঃ ‘হবে না। আমি যা জানি, তুমি সেটা জানো না।‘ তার আত্মবিশ্বাস দেখে সবাই চমকে উঠলো।
www.theweek.in
‘কিন্তু কে রাজা হবে আর কে চোর হবে- এটা ঠিক করে দেবে কে?’ শীতিন সন্দেহের চোখে তাকালো ঈশার দিকেঃ ‘সেটা কি তুমি ঠিক করে দিতে চাও?’ একটু বিরতি দিয়ে ভ্রূ কুঁচকে সে বলে ফেললোঃ ‘তুমি কি নেতা হতে চাও?’

‘আমি দেব না। এটা ঠিক করে দেবে দীদা।‘ ঈশার এই কথায় আমাদের সবার মুখে হাসি ফুটলো। এটা একটা ভালো প্রস্তাব! উঠোন থেকে বাচ্চাদের সাড়িটা পিঁপড়ের মত পিলপিল করে বাড়ির দাওয়ায় উঠে আসলো।

দীদা রাতের খাবার সেরে মাত্র পানের বাটা হাতে নিয়ে দাওয়ায় এসে পা ছড়িয়ে বসেছেন। আমরা তাকে চতুর্দিকে ঘিরে বসলাম। দীদা বুঝে গেছেন, আজ গল্প না শুনে আমরা ছাড়বো না। তিনি একখিলি পান সাজাতে সাজাতে কিচ্ছা শুরু করলেন।

সে এক ভয়ঙ্কর অতিপ্রাকৃত গল্প! শুরুতেই দীদা সবাইকে সতর্ক করে দিলেন- কিচ্ছা শুধু নির্বিকারভাবে শুনে যেতে হবে। মগ্ন হওয়া যাবে না। মগ্নতা মনে ভয় নামক একটা অনুভূতির সঞ্চার করবে। ভয় একবার সৃষ্টি হলে, তা অন্য সব অনুভূতিকে গ্রাস করে ফেলে।

‘তোমরা একসময় ঘুমোতে যাবে।‘ দীদা বললেনঃ ‘মনে যদি ভয় সঞ্চারিত হয়- তবে ঘুমের মধ্যে বিবিধ দুঃস্বপ্ন দেখতে পাবে। দুঃস্বপ্নগুলো ভয়ঙ্কর!’ আমরা শিউড়ে উঠলাম।
D&D Wiki
দীদা গল্প বলে যাচ্ছেন। গল্পের এক একটা চরিত্র আমাদের এক একজনের নামে। দীদার বর্ণনা এত সম্মোহনী যে, সতর্কবাণী ভুলে গিয়ে আমরা ধীরে ধীরে গল্পে মগ্ন হতে শুরু করলাম!

সে এক লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা! গল্পের বয়নে এত বাঁক, আর চরিত্রগুলোয় এত বৈচিত্র্য- শুনতে শুনতে আমরা নিজেদের অস্তিত্ব ভুলে গেলাম। নিজেকে খুঁজতে লাগলাম গল্পের চরিত্রে।

দীদা যখন অত্যাচারী বাদশা ফারুনের কথা বলছিলেন, আমরা ক্ষোভে দগ্ধ হতে হতে ফারুনের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলাম। বেচারা আমাদের দৃষ্টিবানে জড়সড় হয়ে গেলো। অথবা যখন মূল-কূটচরিত্র শীতিনের প্রসঙ্গ আসলো, আমি বাম পাশে বসা শীতিনকে মনে মনে তীব্র গালি দিতে থাকি। মুখে থুতু জমে আসে ঘৃণায়!

আবার যখন মহিম নামক চরিত্রটার বদান্যতার কথা শুনি- তখন আমার মুখোমুখি বসা মহিমের জন্য হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আইয়্যুবের কষ্টের কথা শুনে চোখে পানি চলে আসে।

গল্পের মধ্যে ভীষণ দূর্যোগ আছে, যুদ্ধ আছে। মানুষকে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলার বীভৎসতা আছে! শুনে গায়ে কাঁটা দেয়। আমরা হতবুদ্ধ হয়ে আবিষ্কার করি- ভয়! আমাদের অন্তরে ভয় সঞ্চারিত হচ্ছে।
CBA.ca
গল্পের বাড়তে থাকে। হঠাৎ আমার দু’চোখ ভারী হয়ে আসে ঘুমে। খুব ইচ্ছে করছে- শেষটুকু পর্যন্ত শুনতে। কিন্তু চোখ মেলে রাখতে পারছি না। যেন চোখের উপরের পাতা টেনে নামিয়ে দিচ্ছে কেউ। ঠিক যেভাবে পর্দা নেমে আসে যাত্রাপালার।

দীদার সতর্কবাণীগুলো কানে বাজছে। কি ভুলটাই না করলাম! নিষেধ সত্ত্বেও গল্পে মগ্ন হয়ে গেলাম। এখন দুঃস্বপ্নের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

20200627_034755.jpg


আত্মকথনঃ

poster_1593196763985_rd7uzi0du0.gif

আমি ত্বরিকুল ইসলাম
সখের বশে ব্লগিং করি। ইদানীং কিছুটা আঁকাআঁকি শিখার চেষ্টা করছি।
Hive: @tariqul.bibm
3speak: tariqul.bibm

"পড়াশোনায় ইঞ্জিনিয়ার। পেশায় শিক্ষক। নেশায় লেখক। সাবেক ব্যাংকার। পছন্দ করি লিখতে, পড়তে, ভ্রমণ করতে এবং জমিয়ে আড্ডা দিতে।"

        জীবনটাকে অনেক অনেক ভালোবাসি
Sort:  

Hi @tariqul.bibm, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @simplifylife!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

20 HP50 HP100 HP200 HP300 HP500 HP1000 HP

JOIN US ON