সূর্যাস্তের লালিমা, করোনার কালিমা || জীবন সুন্দর || Life is beautiful

in BDCommunity4 years ago

20200625_023901.jpg

প্রতিদিন একই সূর্য উঠে। একই সূর্য ডুবে। পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত। শেষ দিন পর্যন্ত এই সূর্যটাই আসবে যাবে। কিন্তু এই সূর্য যে দিন গুলো বয়ে নিয়ে আসে, সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন রঙে রঙ্গিন হয়। কখনো বেদনার নীল রঙে নির্লিপ্ত হয়। আবার কখনো শোকের কালো রঙে মলিন হয়। কখনো বা ভালোবাসার লালে রক্তিম হয়..


20200623_181816.jpg

এখনকার সূর্য গুলো কেমন যেন মলিন। প্রতিদিন শোকবার্তা নিয়ে আসে। মন খারাপ করা মূহুর্তগুলো রেখে অস্ত যায়। করোনা আসার পর থেকে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আমি আনন্দের উচ্ছ্বাস খুঁজে পাই নি।

আমার ভাগ্নী প্রতিদিন কয়েকবার বাসা থেকে বের হতো আগে। স্কুলে যেতো, কোচিংএ যেতো, বিকেলে খেলতে যেতো। কখনো কখনো চকলেট কিনে দিতে অসময়েও তাকে নিয়ে বের হতাম। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে তার ক্লাস-কোচিং সব বন্ধ। এখন সে আর বের হয় না।

তার বিনোদনের জন্য এবং ভিটামিন-ডি এর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে মাঝে মাঝে তাকে নিয়ে ছাদে যাই। সে তখন পুরো ছাদে দৌড়ে বেড়ায়। খাচার পাখি হটাৎ মুক্তি দিলে তা যেমন একটানা আকাশে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে বেড়ায়, সেরকম।

20200625_024118.jpg

20200625_024105.jpg

20200625_024157.jpg


গতকালও তাকে নিয়ে ছাদে গিয়েছি বিকালে। বিকেল বলতে একেবারে শেষ বিকেলে। সূর্য ডুবি ডুবি করছে। তাকে বলতেই সে আব্দার করলো সূর্যাস্ত দেখবে।

20200623_181759.jpg

ছাদের পশ্চিম পাশে বাগান। সেটি ঘের দেওয়া। ছোট বাচ্চাদের জন্য সেটা ভেদ করে সূর্যাস্ত দেখা কঠিন। চাবিও আনি নি। কিন্তু তার জেদ, দেখবেই। আমি তাকে উঁচু করে ধরে দেখালাম। এতটুকুতে কি আর সাধ মেটে। কতদিন পর সূর্যাস্ত দেখা!

20200623_180749.jpg

আমি অন্যদিকে মনযোগ দিতেই সে রেলিং বেয়ে গুটগুট করে উঠতে শুরু করলো। আমি হটাৎ তাকাতেই দেখি সে তার কচি কচি হাত গুলো দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রেখেছে ষ্টীলের রড। আর চেষ্টা করছে আরও উপরে উঠতে। যেন স্পষ্ট দেখা যায় সূর্য।

20200623_181939.jpg

20200624_170542.jpg

20200623_180825.jpg

আমি ডাক দিতে গিয়েও থেমে গেলাম। ভয় হচ্ছিলো, হাত স্লিপ করে উপর থেকে পরে ব্যথা পায় কিনা! কিন্তু তার উচ্ছাসের কাছে আমার আশংকা পরাজিত হল।

আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি, তার আনন্দ। হটাৎ মনে হল, এই মুহুর্তটা ক্যামেরার ফ্রেমে ধরে রাখি। খুব দ্রুত কয়েকটি ক্লিক করলাম। সূর্য তখন খুব দ্রুত টা টা দিচ্ছে। ডুবি ডুবি করছে।

20200624_170358.jpg

আস্তে আস্তে বেলা ডুবে এলো। সূর্য ডুবে গেলেও কিছুক্ষণ তার লালিমা থেকে যায়। যেমন কোন মানুষ হঠাৎ করে হারিয়ে গেলে, তার স্মৃতি থেকে যায়! আমাদের কাঁদায়। সূর্যের লালিমাও আমাদেরকে এরকম একটা মন খারাপ করা মূহুর্ত যেন এনে দেয়।

20200623_181941.jpg

কত কত মানুষ প্রতিদিন চলে যাচ্ছে সূর্যের মত। সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা নিউজ পোর্টালে ঢুকলে শুধু মৃত্যুর সংবাদ পাই। মৃত্যু দেখতে দেখতে আমাদের কেমন যেন গা সওয়া হয়ে গেছে মনে হয়! এখন আর মৃত্যুগুলো প্রথম দিকের মত এতটা আবেগাপ্লুত করে না।

খবর আসে বাড়ি থেকে, চাচাতো ভাইয়ের করোনা পজিটিভ। এক ম্যমা সৌদি আরবে আইসিইউতে আছেন। উনি ভেন্টিলেটর লাগানো অবস্থায় দেশে কল করেছেন। কথা বলতে পারেন নি। শুধু কেঁদেছেন। ভিডিও কলে শুধু অশ্রু দেখা গেছে। আমার স্ত্রীর বড় ভাইও খুব অসুস্থ। এসব নিউজ শুনে যাই। ভেতরটা যেন আর নাড়া দেয় না। শুধু একটু শূন্যতা অনুভব হয়।

তবে কি ভেতরের নদীটা মরে গেছে? পাথর জমেছে? অথচ আমি নদীটাকে বাচিয়ে রাখতে কত না চেষ্টা করছি। নিজেকে উদ্দীপ্ত রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোন লাভ হচ্ছে না। ভেতরটা মরে যাচ্ছে।

তারপর যখন কোন এক সন্ধ্যায় একটা ছোট্ট মেয়েকে রেলিং বেয়ে তীব্র কৌতুহলে উপরে উঠতে দেখি, আর রক্ত লাল সূর্য দেখে উচ্ছ্বসিত হতে দেখি, তখন মনে হয়- জীবন আসলে সুন্দর!

এই বেঁচে থাকাটাও অনেক অনেক বেশি সুন্দর!

20200625_024134.jpg

20200623_180825.jpg

20200624_170604.jpg

Sort:  

আল্লাহ আমাদের মুক্তি দান করুন 😊😊

এটাই এখন সমগ্র বিশ্ববাসীর সম্মিলিত চাওয়া ।

অসাধারণভাবে উপস্থাপন করেছেন আমাদের বর্তমান অবস্থাকে। কি আর করার। মহান আল্লাহ্ উত্তম পরিকল্পনাকারী।

জ্বি ভাই। আপাতত ঐশী সাহায্য ছাড়া খুব দ্রুত পরিস্থিতি পরিবর্তন হবার কোন লক্ষন দেখছি না৷ আল্লাহ সহায় হওক।

জানি না এভাবে কিভাবে চলবো। সব কিছু থেমে আছে। শুধু থেমে নেই চাহিদা

সব চেয়ে বেশি কষ্টে আছেন নিম্নবিত্ত মানুষেরা।