আমার গল্পের এমন হযবরল নাম করণ দেখে ভিন দেশী কোন ব্যক্তি আমাকে উপহাস করে তাহলে আমি মোটেও কোন প্রকার লজ্জাবোধ করব না। কিন্তু এমন নামকরন দেখে আমার স্বদেশী কোন ব্যক্তি আমাকে নিয়ে উপহাস করে তাহলে সত্যি আমি লজ্জা পাবো কারন গল্পের এমন নামকরণ আমাদের কাছে মোটেই নতুন কোন বিষয় নয়। এমন কিম্ভুত নামকরন দিয়ে আমাদের দেশে কোটি টাকা বাজেটের চলচিত্র নির্মিত হতে পারে,আমি তো চুনোপুঁটি ভাই, আমি নির্দ্বিধায় আমার গল্পের নাম "ঘুড়ি The Kite" রাখতেই পারি।
নামে কি আসে যায় রে ভাই, কিন্তু কর্মে অনেক কিছু আসে যায়। হোক না আমার নাম বালতি মিজান অথবা খর্চুন বাবু, কাজ যদি ভালোর তালিকা হতে করে থাকি তখন এই বালতি মিজান অার খর্চুন বাবু নামটা মানুষের মুখে চাপা হাসির জন্ম দেবে না বরংচ এই নামটার অপর নাম হবে অনুপ্রেরনা। আমার নাম সাধন যার অর্থ "সিদ্ধি লাভ করা"। আমি আমার সমগ্র জীবনে কোন প্রকার সিদ্ধি লাভ করতে পারি নাই, মানুষের চাপা হাসিটা প্রকৃত অর্থে আমারি প্রাপ্প।
উপরের কথাগুলো বলার পিছনে আমার কাছে যথেষ্ট পরিমানে যুক্তি আছে এবং উদ্দেশ্য ও আছে। ব্লগটা একটু গম্ভীর হতে যাচ্ছে তাই প্রথমেই একটু মজা করে নিলাম।
আমি হঠাৎ করে আজকে গল্পের নামকরনের পিছনে আদা জল খেয়ে লেগে পড়লাম কেন জানেন, এই কিম্ভূতকিমাকার নামকরনটা আমাদেরকে অনেক ভাবেই শিক্ষা দেয়। আমাদের দেশের বিখ্যাত একজন নায়ক (অভিনেতা বলতে পারলাম না ওনাকে তার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী) অনন্ত জলীলের পিছনে একটু আদা জল খেয়ে লাগা যাক। অনন্ত জলীলের কি এমন উদ্দেশ্য ছিল যার কারনে তিনি তার কোটি টাকা বাজেটের চলচিত্রের নাম এমন বিদঘুটে রেখেছিলেন। খোঁজ এর ইংলিশ অনুবাদ যে The Search এটা বর্তমান যুগের প্রথম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিশুরাও জানে। তাহলে কি অনন্ত জলিল আমাদের সমগ্র বাঙ্গালি জাতি মূর্খ ভেবেছেন? না তিনি মোটেও এমনটা ভাবেন নাই।
তাহলে কি ছিল তার চিন্তা ধারা। তিনি কি, খোঁজ এর সাথে The Search কে খোঁজের ইংলিশ অনুবাদ হিসাবে ব্যবহার করেছেন না "The Search" কে পৃথক শব্দ রূপে ব্যবহার করেছেন। নায়ক অনন্ত জলিল হয়তো এই বিষয়টার ব্যাখা অনেক ভাবেই দিয়ে থাকবেন মিডিয়ার কাছে, কিন্তু আজকে আমার থেকে সত্যিটা জেনে নিন। অনন্ত জলিল খোঁজ এর পরে The Search কে পৃথক শব্দ রূপেই ব্যবহার করেছিলেন এবং এমন সংমিশ্রন দিয়ে তিনি দর্শকদের এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন যে তার অভিনিত "খোঁজ The Search" চলচিত্রে আমরা বাংলা এবং ইংলিশ দুই দেশের চলচিত্রের ধরনের একটা সংমিশ্রণ দেখতে পারব। জানি না অনন্ত জলিল মহাশয় ওনার নামকরনের পিছনে লুকায়িত বর্তা দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন কিনা। তবে এটা বলতে পারি এমন নামকরনের জন্য তিনি অনেক বেশি সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন।
আমরা কেনইবা শুধুশুধু অনন্ত জলিলকে সমালোচনার বেড়াজালে বন্দি করার আপ্রান চেষ্ঠা করেছিলাম। জলিল মশাইতো খারাপ কিছু করেন নাই,বরংচ ওনি সঠিক কাজটাই করেছিলেন।
আজ যদি বাঙ্গালী জাতি পশ্চিমা সংস্কৃতির মোহে মাতাল না হতো, পশ্চিমা সংস্কৃতির চর্চা না করতো, পশ্চিমা সংস্কৃতিকে নিজেদের সংস্কৃতির উর্দ্ধে অবস্থান না দিত, তাহলে অনন্ত জলিল মহাশয় পশ্চিমা ধারায় চলচিত্র করার অনুপ্রেরনা পেতেন না। তখন হয়তো ওনার অভিনিত চলচিত্রের নাম শুধু বাংলায় খোঁজের পরিবর্তে অনুসন্ধান অথবা তার চেয়ে আরো ভালো সমার্থক কোন বাংলা নাম রাখতেন।
গ্রাম বাংলায় ঘুড়ি উড়ানো যদিওবা আমাদের কোন সংস্কৃতি না, আমাদের ঐতিহ্য। আর ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করেই সংস্কৃতি তার নিজস্ব পরিধি রচনা করেন। এইতো সেই দিনের কথা তখন আমি হাফপ্যান্ট পড়ি, আমাদের গ্রামের বাজারের পাশে একটা অনেক বড় স্কুল মাঠ ছিলো। প্রতিবছর ঠিক এমন সময়টায় ঘুড়ি প্রতিযোগিতার অায়োজন করা হতো, আর সেই আয়োজনকে কেন্দ্র করেই আয়োজন করা হতো ঘুড়ি মেলার। কোন উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলার অায়োজন, বাংলার সংস্কৃতির এক অবিছেদ্য বিষয়।
কোথায় সেই আজ ঘুড়ি প্রতিযোগিতা, কোথায় গেল আজকে ঘুড়ির মেলা। আমি অনেক বড় হয়ে গেছি তাই হয়তোবা সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমারতো এখন ঘুড়ি উড়াতে ভালো লাগে না তাই হয়তোবা আর কেউ প্রতিযোগিতার অায়োজন করে না। প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা কি তাই। মোটেই না, বাস্তবতার অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। অপসংস্কৃতির বহাল অনুপ্রবেশ আমাদের বাংলার চির চেনা ঐতিহ্য গুলোকে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করে আমাদের স্ব-সংস্কৃতির গুরুচন্ডালী দশা না আমার গল্পের শিরোনামের মতোই সংমিশ্রত দশায় পরিনত করেছে।
এই সংমিশ্রণের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় নতুন কেমন সংস্কৃতির জন্ম নিয়েছে তার জলজন্তু প্রমাণ আমাদের বর্তমান "টিকটক" প্রজন্ম। লবন পানির সংমিশ্রণ থেকে লবনকে পৃথক করতে গেলে যেমন, পানিকে বাষ্পীভূত করলেই হয়, আমাদের বর্তমান সংস্কৃতিকে অপসংস্কৃতি গুলোর মহা মিশ্রন থেকে কিভাবে পৃথক করা সম্ভব আমার সঠিক পথটা ঠিক জানা নাই। কিভাবে থাকবে বলুন অাপনি অামি সকলেইতো বর্তমান শঙ্কর সংস্কৃতির সাথে কাঁধে কাঁধ এবং হাতে হাত রেখে চলছি।
আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সংরক্ষনের দায়িত্ব আমাদের সকলের, আসুন আমরা সমগ্র বাংলায় না পারি, অত্র প্লাটফর্মে আমাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করি।
ধন্যবাদান্তে,
সাধন চন্দ্র বর্মন