"ফুটপাতের সেই চায়ের দোকানের মাসিক ভাড়া যখন ৯০০০ টাকা !!!"

in BDCommunity3 years ago (edited)

সুজন দাদা আগে একটা বেনসন দাও তো, তারপর আঁদা দিয়ে কড়া করে একটা রং চাঁ বানাও, একটু তাড়াতাড়ি করিও ভাই, অফিস খুলে ফেলেছে। রাস্তায় যে জ্যাম আজকে অনেক দেরী হয়ে গেল। দোকানে ঝুলানো গ্যাস ম্যাচ দিয়ে বেনসন সিগারেটটা ধরিয়ে দুইটা সুখটান দিতেই, এই নেন আপনার আঁদা দিয়ে কড়া রং চাঁ। সুজন দাদা চাঁ-টা জটিল হইছে। আমার চাঁ প্রতিদিনেই জটিল হয়, শুধু আপনাদের টেস্ট পরিবর্তন হয় মাঝে-মাঝে তাই চাঁয়ের স্বাদটা বুঝতে পারেন না। সুজনের কাছে প্রতিটি কথার জবাব মনে হয়, আগে থেকেই রেডি করা থাকে। ওনাকে কথায় হারানো খুবই কঠিন, এর দুইটি কারন হতে পারে, প্রথম: মেড ইন নোয়খালী এবং দ্বিতীয় কারন দীর্ঘদিন যাবৎ ফুটপাতে চায়ের ব্যবসা হতে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা।


IMG_20200727_134609.jpg

চাঁটা খুব গরম থাকায় প্রতিদিনেই চাঁয়ের কাপ থেকে দুই চুমক খেতেই সিগারেট টা শেষ হয়ে যায়। সুজন দাদা সিগারেট তো শেষ হয়ে গেল, কিন্তু তোমার চাঁ-তো শেষ হলো না। কথা শেষ হবার আগেই বেনসনের প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে নিজে ধরিয়ে, ধপাধপ দুইটা টান মেরে, এই নেন দাদা চাঁ শেষ করেন। সুজন হতে পারে ফুটপাতে একজন চায়ের দোকানদার কিন্তু তার উপস্থিত ব্যবসায়িক প্রতিভা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। যেমনটা আমাকে করত সবসময়।


IMG_20200722_142946.jpg

চাঁয়ের কাপের চাঁ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তখন অবধি ‍দ্বিতীয় সিগারেটের অর্ধেকটাও শেষ হয় নাই। এরি মাঝে লেইটি লতিফ সম্প্রদায়ের আরো কয়েকজন সহকর্মী এসে হাজির হয়ে যায়। সাধন দাদা চা খাইছিস? জ্বি দাদ চাঁ খেয়ে দুই নম্বর সিগারেট টানায় ব্যস্ত আছেন। চাঁয়ের সাথে নাস্তা হিসাবে সিগারেট দুইটা খাইছেন, সুজন আবার মার্কেটিং করা শুরু করে দেয়,যদি দাদার সাথে এক সাথে অফিসে যেতে চান তাহলে দাদাকে আরেক কাপ আদা দিয়ে চাঁ এবং আরেকটা বেনসন খাওয়ান তাড়াতাড়ি। এখানে না বলার মতো কিছু নাই, সহকর্মীদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে কয়েক-শ কাপ চাঁ এবং কয়েক-শ পিস সিগারেট কোন ব্যাপার না। সুজনের মতো চায়ের দোকনদাররা বিষয়টা খুব ভালোভাবেই জানেন এবং দীর্ঘদিনের পরিচয়, প্রতিটি মানুষের অভ্যাস সম্পর্কে তাদের খুব ভালো একটা ধারনা হয়ে যায়। তাই তারা স্বল্প সংখ্যক গ্রাহকের মাঝে তাদের সর্বচ্চো বিক্রয় করতে পারেন।

IMG_20200725_153543.jpg

সকাল বেলার আড্ডা শেষে যখন বিল পরিশোধ করতে যাই আমরা, তখন সুজন প্রতিদিনের মতোই বলে বসে, দাদা মানি ব্যাগের কোনায় যে হাজার টাকার নোট গুলো দেখা যাচ্ছে ওখান থেকে আমাকে দুই একটা নোট দেনতো, আজকে তবিল একটু শর্ট। অফিস শেষে বাসায় যাবার সময় নিয়ে যাইয়েন। আমরা কেউ কখনো না করি না। অফিসে ঢুকে পড়লে আর কিসের খরচ আমাদের। টাকাটা তো মানি ব্যাগেই পড়ে থাকবে এবং দিনে আরও দুইবার সুজনের দোকানেই আসতে হবে চা এবং টা গ্রহনের জন্য এবং টাকা তাকেই দিতে হবে। কিছু সময়ের জন্য টাকাটা নিয়ে যদি ওর কিছুটা উপকার হয়, তাহলে তো ভালোই। তাছাড়া মাসের ক্রান্তি কালে চা-টা গ্রহনের জন্য টাকাটাও পকেটে যখন থাকে না, তখনতো সুজন মহাসয়েই লজ্জা ভেঙ্গে বাকি খাওয়ান নির্ধিধায়। সুজনের এই বিষয়টা আমার খুব ভালো লাগত, কারন বুদ্ধি, সততা, কর্মনিষ্ঠা থাকলে স্বল্প পূজিঁতেও ব্যবসা করে নিজের পরিবার চালানো সম্ভব।


WhatsApp Image 2021-05-03 at 5.53.15 PM (2).jpeg

সুজনের এই ভ্রাম্যমান চায়ের দোকানের চারটি চাঁকা আছে। কেনো জানেন, আমাদের দেশের প্রশাসনের দাবড়ানিতে যাতে তার দোকানটাকে সুরক্ষিত কোন স্থানে খুব দ্রুত স্থানন্তরিত করা যায়। দেশের প্রশাসনের লোকজনেরই সুজন এবং সুজনের মতো হাজার হাজার ফুটপাতের দোকানদারদের থেকে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে চাঁদা গ্রহন করে তাদেরকে ব্যবসা করার সুযোগ প্রদান করে মহতি কাজ সম্পাদন করেন। এবং প্রতি মাসে অনন্ত্য দুই থেকে তিন বার ফুটপাতের দোকান নিধন অভিযান চালিয়ে আরও মোটা অংকের কিছু হাতিয়ে নিতেও পিছু পা হন না।


IMG_20200722_142803_1.jpg

ফুটপাতের চায়ের দোকানদার দৈনিক কতটাকাই বা উপার্জন করে? উপার্জন যাই হোক না কেন মামাদের দৈনিক চাঁদা পরিশোধ করতেই হবে। তানাহলে, পরেরদিন দোকান খুলতেই পারবে না সুজনরা। দেশের আইনের কাছে সুজনদের মতো হাজারো ফুটপাতের দোকানদারা আজ ভুক্তভুগী। তারউপর চলছে ক্রমান্বয়ে লকডাউন। লকডাউন এবং রমাজান মাসে তাদের দোকান খোলা সম্পূর্নভাবে নিষিদ্ধ। বুঝতেইতো পারছেন কেমন যাবে তাদের রমজানের ঈদ।

ভালো থেকো সুজন, শতকষ্টের মাঝেও তোমার মুখের হাসি কখনো মলিন হতে দেখি নাই, সেই হাসিটাই সারাজীবন ধরে রেখো।


Hive Ending Logo.jpg

Sort:  

My Tweet Share:

Hi @shadonchandra, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

20 HP50 HP100 HP200 HP300 HP500 HP1000 HP

JOIN US ON