বাংলায় একটা চলিত প্রবাদ আছে “নাই মামার চেয়ে কানা মামা অনেক ভালো”, তবে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রবাদের সেই কানা মামার অবদান কতটুকু এটা আমারা কখনো বিশ্লেষন করে দেখার চেষ্টা করি না। এই কানা মামা হয়তো আমার মামা না থাকার অভাবটাকে পূরণ করতে পারবে কিন্তু সে কি মামা হয়ে ভাগ্নে অথবা ভাগ্নির কতটুকু আবদার পূূরন করতে পারবে? হয়তো এমনটাও হতে পারে সেই মামা ভাগ্নে বা ভাগ্নি কাছে এক প্রকার বোঝা সরূপ। প্রবাদ থেকে এখন একটু বাস্তবতায় আসা যাক, বাংলাদেশে সরকার ইতি মধ্যেই বাংলাদেশের সকল পোশাক শ্রমিদের মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট এ তাদের এপ্রিল মাসের বেসিক বেতনের ৬০% বেতন প্রদান করেছেন, বাংলাদেশ সরকারের সত্যিই এটা একটা প্রসংশনিয় উদ্দ্যেগ। কিন্তু এখানেও একটা কিন্তু আছে।
src
এই কিন্তুটা একদম বাস্তবসম্মত। হয়তবা তা অমানবিক নয়, কিন্তু আমাদের মানবিকতা এর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশ সরকার পোশাকশিল্প থেকে সর্বচ্চো রেমিটেন্স এবং কর আদায় করেন এককথায় পোশাকশিল্প বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র সর্বচ্চো উপার্জনের খাত। কিন্তু এই পোশাকশিল্প এবং এই পোশাকশিল্পের শ্রমিক, কর্মচারী এবং কর্মকর্তারাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী অবহেলিত। কেইনবা পোশাকশ্রমিদেরকে তাদের বেতন ও ভাতার জন্য সবসময় আন্দোলন করতে হয়, কেনইবা তাদেরকে তাদের প্রাপ্পের জন্য জীবন দিতে হয়। আমারা সমগ্র বাঙ্গালী জাতি এই প্রশ্নের উত্তরে লজ্জিত বোধ করি।
আজ যখন আমাদের সরকার পোশাকশ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতন তাদের মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের মাধ্যমে প্রদান করছেন, আমরা যারা পোশাকশিল্পের সাথে জড়িত নই, তারা বাংলাদেশ সরকারকে বাহবা দিচ্ছি। কিন্তু আমরা যারা এই পোশাকশিল্পের সাথে জড়িত শুধু তারাই বুঝতে পারছি এই ৬০% বেতনের তাৎপর্য কতটুকু। আজ আমাদের সান্তনা শুধু একটাই প্রবাদ বাক্য “নেই মামার চেয়ে কানা মামা অনেক ভালো”।
src
পোশাকশিল্পের মালিকদের একচেটিয়া শাসন চলে আমাদের দেশে, এটা আমাদের কারও অজানা নয়, দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে তাদের ভূমিকা পরোক্ষ হলেও খুবই সক্রিয়। আমাদের পোশাকশিল্পের বর্তমান অবস্থা করুন হলেও তেমন খারাপ না এবং প্রতিটি পোশাকশিল্পের মালিক এখন অবধি দেওলিয়া হয়ে যায় নাই। দেশের অধিকাংশ পোশাকশিল্পের মালিকরা দূর্যোগকালিন পরিস্থিতিতে শ্রমিদের একাধিক মাসের বেতন এবং ভাতা দেবার ক্ষমতা রাখেন। কারন তারা ছোট একটা ফ্যাক্টরী থেকে খুব অনায়াসে একটি গ্রূপ অব কোম্পানীর মালিক হতে পারেন এই পোশাকশিল্প দিয়ে। তার কারন আমাদের দেশে খুব সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যায়। যেটা অন্যকোন দেশে সম্ভব নয়। তাইতো আজ অনেক পোশাকশিল্পের মালিকেরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।
আমার প্রশ্ন এখানেই পোশাকশিল্পের মালিকেরা সরাবছর ব্যবসা করে মাত্র একমাস তাদের শ্রমিদের বেতন ভাতা দিতে অপারক। সত্যিই খুবই হাস্যকর ব্যাপার এটা এবং বাস্তবেই যদি আমাদের পোশাকশিল্পের মালিকদের এমন পরিস্থিতি হয়ে থাকে তাহলে কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি আমাদের পোশাকশিল্প ধ্বংসের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। পোশাকশিল্পকে এখন আর শিল্প বলা যাবে না বলতে হবে “দিনমজুরের কারখানা”। শুধু পার্থক্য এতোটুকুই মুজুরী প্রতিদিন না দিয়ে মাস শেষে দেওয়া হয়।
বেসিক বেতনের ৬০% মানে একজন পোশাকশ্রমিকের কাছে খুবই সামান্য পরিমান অর্থ। যদি গড় করি তাহলে এই বেতন দাড়ায় ৪৮০০/- এর মতো। আর এই অর্থ দিয়ে ঢাকা এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় জীবন যাপন করা খুবই কষ্টসাধ্য। আমাদের দেশে পোশাক শ্রমিকরা টিকে আছে তাদের বেসিক বেতনের সাথে প্রতি মাসে কিছু অভারটাইমের টাকা যোগ করে একটা ভালো বেতন তুলতে পারে বলে। তাদের বেসিক বেতন দিয়েও তাদের জীবন চালানোটা অনেক কঠিন, সেখানে বেসিকের ৬০%, জীবন আরো একমাসের জন্য অনেক কঠিন হয়ে গেল তাদের কাছে। তাই হয়তো অনেক শ্রমিক রাস্তার নেমে বেসিক বেতনের সম্পূর্নটার জন্য দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেছিল।
src
আজ করোনার মৃত্যুঝোবলের আতঙ্ক নিয়ে লক্ষ লক্ষ পোশাকশ্রমিক দেশের জন্য, জাতির জন্য, কাজ করে যাচ্ছে। জীবনের চাহিদা তাদের মৃত্যুকে জয় করতে বাধ্য করেছে। কেউ পারুক আর না পারুক বাংলা পোশাকশ্রমিকেরা করোনাকে জীবনের একটা অংশ ভেবে নিয়েই জীবন যুদ্ধে পা বাড়িয়েছে। আজ তাদেরকেই তাদের প্রাপ্প বেতনটাই দেওয়া হচ্ছে না। আজ লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারী, কর্মকর্তারা লকডাইনে থেকেও তাদের বেতনের সম্পূর্ণটাকাই পাচ্ছেন। পোশাক শ্রমিকরা কি অপরাধ করলো, দেশের অর্থনীতিতে এতো বড় অবদান রাখার পরেও তারা কেন দেশ এর কাছ থেকে মাত্র একমাসের সম্পূর্ন বেতনভাতাদি আশা করতে পারলো না।
জীবন চলবে তার নিজস্ব গতিতেই, কেউ তাকে বাধা দিতে পারবে না। সরকার ৬০% বেতন না দিলেও আমাদের জীবন চলত আমার কেউ না খেয়ে মারা যেতাম না, তবে যদি মানবতা দেখানো হয় সবকিছু বিশ্লেষন করেই দেখানো উচিত।
ধন্যবাদ সবাইকে।