ছুটির ঘন্টা
০১.
সূর্যটা পেছনে রেখে আমরা একটি প্রাচীন দালানের সামনে এসে দাড়ালাম।
বাবা আঙ্গুল উচিয়ে বললেনঃ এটা তোমার ইশকুল।
তারপর আমার হাত ছেড়ে দিয়ে তিনি সূর্যের দিকে হাটতে হাটতে মিলিয়ে গেলেন।
০২.
একজন সুদর্শনা আমার হাত ধরে হাটছেন। আমরা একটা উপত্যকার পাশে
থামলাম। ম্যাডাম বললেনঃ যাও, এটা খেলার মাঠ।
এখানে ইচ্ছে মাফিক ছোটাছুটি করা যায়। কেউ বাঁধা দেবে না।
তবে অই ঘন্টাটির কাছে যেও না। ওটা বেজে উঠলে অধিকার গুটিয়ে আসে।
ওটা বেজে উঠলে খুলে যায় ক্লাসরুম।
আমাকে মাঠে রেখে তিনি অফিসঘরে চলে গেলেন
চেয়ে দেখি- ঘরটির নেমপ্লেটে লেখা আছেঃ প্রযোজক।
০৩.
একপাশে জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এখানের কাউকে আমি চিনি না।
নিজেকে হঠাৎ বড় নিঃসঙ্গ এবং একা মনে হল!
তখুনি বিজলীর মত যেন সহস্র বছরের আন্ধার চিরে এক চিলতে হাসিঃ হ্যালো,
আমি ঈভা।
আমিও মুঠোর মধ্যে তার নরোম পাঁচটি আঙ্গুল মুড়িয়ে আস্থার হাসি হাসলাম।
০৪.
ঘন্টাটি একবার বাজাও। টুংটাং শব্দের মূর্ছনা আমার ভালো লাগে।
কর্ণকুহরে আমি সেই নিষিদ্ধ সঙ্গীতের স্পর্শ পেতে চাই।
আমি হাতুড়িটি তুলে নিলাম। ঈভার অবিরাম আবদার কম্পমান আমার মগজে।
ঢং ঢং শব্দে মুহ্যমান হল খেলাময় উদ্যান।
০৫.
একজন টিচার আমাকে টানতে টানতে ক্লাসরুমে নিয়ে গেলেন। চেয়ে দেখি-
ক্লাসের উপরে একটি প্লেটে লেখা আছে সবুজ কালিতেঃ মঞ্চ!
সেখানে একজন গোমড়া মুখে পাঠ করছেন- ক্লাসের নিয়মাবলী।
এরচে’ উদ্যান ভালো ছিল- এ কথা বলতেই তিনি পাশ ফিরে তাকালেনঃ
তুমি যেখান থেকে এসেছ, সেখানে কোন দেয়াল ছিলো না।
প্রতিটি দেয়ালের নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে। এখানে চলতে হয় নিয়ম মাফিক।
নিয়মের ব্যত্যয় হলে?- চেয়ে আছে বালক প্রশ্নাতুর চোখে।
টিচার খসখস করে একটা শব্দ লিখে দিলেন বোর্ডেঃ শাস্তি।
০৬.
ছুটির ঘন্টাটা বেজে উঠবার অপেক্ষায় আছি।