কবি কাজী নজরুল ইসলাম.. সরকার বিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ার কারনে জেলে গিয়েছেন.. সেখানে গিয়ে জেলের অভ্যন্তরে নানা রকম অনিয়মের বিরুদ্ধে শুরু করেছেন অনশন.. তার একটাই দাবি.. জেলের অভ্যন্তরে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া হোক..
একটা গানও রচনা করে ফেলেছেন আন্দোলনের সময়:
কারার ঐ ওয়াইফাই
ভেঙ্গে ফেল পাসওয়ার্ড রে ভাই
আছিস যত বন্দিশালার
সেলিব্রেটি..
ওরে ও ফেসবুকার,
যত ব্লগার ইউটিউবার
স্ট্যাটাসে কাঁপিয়ে দে তার
প্রোফাইল আইডি..
কারার ঐ ওয়াইফাই..
গানটা খুব ভাইরাল হয়ে গেছে.. সবার মোবাইলে মোবাইলে.. সরকার যদিও ব্যান করে দিয়েছে.. কিন্তু ঠিকই ফেইক আইডি থেকে মানুষ গানটা পোস্ট দিচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন.. সেখানে তিনি রিকুয়েস্ট করেছেন নজরুলকে.. তাঁর অনশন ভেঙে ফেলার জন্য.. সে সঙ্গে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন.. কেউ যদি তার পাশে নাও থাকে.. তিনি যেন পিছপা না হন।
একটু পরেই স্ট্যাটাসটা এডিট করে.. এর সঙ্গে আরো যুক্ত করে দিয়েছেন.. একটি গান:
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে
তবে একলা চলো রে..
রবীন্দ্রনাথের স্ট্যাটাস খুব ভাইরাল হয়ে গিয়েছে.. অবশ্য তিনি যা দেন.. তা-ই ভাইরাল হয়ে যায়.. এদিকে নিউজ চ্যানেলগুলো তাকে আজকে টকশোতে থাকার জন্য বিশেষভাবে ধরেছে.. তিনি সাধারণত লাইভ টকশোতে অংশ নেন না.. না করে দিয়েছেন।
এদিকে সুফিয়া কামাল করোনা নিয়ে একটি কবিতা লিখেছেন.. যেটি অনলাইনে তুমুল শেয়ার করছে মানুষ:
গোল করোনা.. গোল করোনা..
খোকন ঘুমায় খাটে
এই ঘুমকে কিনতে হল
নবাব বাড়ির হাটে..
কবিতাটা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে.. বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করছে মানুষ.. 'করোনা গোল' .. সেটা ঠিক আছে.. সেটি না হয় মানা গেল.. কিন্তু খোকন বলতে কাকে বুঝিয়েছেন??
কারো কারো মতে খোকন বলতে বাঙালি জাতিকে বুঝিয়েছে.. আবার কারো কারো মতে খোকন বলতে বুঝিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে.. আবার কেউ ব্যাখ্যা দিচ্ছে খোকন বলতে এখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বোঝানো হয়েছে.. 'নবাব বাড়ির হাটে' বলতে তাদের মতে.. আমেরিকায় যেই সিনেটর ও ইহুদি লবি কাজ করে নির্বাচনে জেতার জন্য.. সেটি।
এদিকে আন্তর্জাতিক ভাবে একটা চাপ এসেছে.. সরকার কবি সুফিয়া কামালকে রিকোয়েস্ট করেছে.. কবিতাটি ডিলিট করে দেওয়ার জন্য.. কিন্তু সুফিয়া কামাল অপারগ হয়ে জানালেন.. তিনি ব্লকচেইন ব্যবহার করেন.. আর ব্লকচেইনে একবার কোন কিছু পোস্ট করলে সেটি ডিলিট করা যায় না।
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী এই সংবাদ শুনে রীতিমত ক্ষেপে গেলেন.. ফেসবুক ব্যবহার না করে ব্লকচেইন ব্যবহার করায় সুফিয়া কামালের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা ঠুকে দিলেন।
মিডিয়া আরো একটা বিষয় পেয়ে গেল.. শুরু হল আলোচনা-সমালোচনা.. টকশোতে ঝড় উঠল.. টকশোর অন্যতম প্রধান বক্তা মোহিতলাল মজুমদার.. তীব্র নিন্দা জানিয়ে সুফিয়া কামালকে অবিলম্বে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আহ্বান জানালেন।
অবশ্য মোহিতলাল মজুমদারের বক্তব্যে.. প্রায়ই সমকালীন বিখ্যাত সেলিব্রেটিদের বিরুদ্ধে.. তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার সমালোচনা প্রতিধ্বনিত হয়.. তাকে সুশীল সমাজ খুব একটা পাত্তা দেয় না।
সুশীল সমাজ বরং সুফিয়া কামালের পক্ষ নিয়েছে.. এমনকি নিভৃতের কবি জীবনানন্দ দাশ তাকে নিয়ে একটি রূপক কবিতা লিখে ফেললেন:
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি
বোলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে
ফিরে এসো সুরঞ্জনা..
কবিতাটিতে যুবক বলতে কবি মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বুঝিয়েছেন.. সুরঞ্জনা ছদ্মনামে কবি সুফিয়া কামালের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন.. এই ধরনের নোংরা যুবকদের নিয়ে কবিতা না লিখে বরং ফিরে আসতে সাহিত্যের মূলধারায়..
প্রকৃতির কবি জসিমউদ্দিন তখন স্বভাবসুলভ গ্রাম্য ভাষায় লিখে চলেছেন:
কচি লাউয়ের ডগার মত বাহু দুখান তার..
সুফিয়া কামাল কবিতাটি পড়ে বুঝতে পারলেন.. তাকে ঈষৎ ব্যঙ্গ করে কবিতাটি লিখেছেন জসীমউদ্দীন.. তিনি সঙ্গে সঙ্গে একটা স্ট্যাটাস দিলেন.. এর তীব্র প্রতিবাদ করে।
অবশ্য কবি জসীমউদ্দীন স্বভাবসুলভ গা বাঁচানো ভঙ্গিতে.. কমেন্ট করলেন যে.. কবিতাটি সুফিয়া কামালকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়নি..
ফেসবুকের যুবকেরা আরও একটা বিষয় পেয়ে গেল.. কবিতাটি নিয়ে শুরু হলো আলোচনা-সমালোচনা.. ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করতে শুরু করল.. এদিকে নজরুল যে জেলখানায় এখনো ওয়াইফাই সুবিধা পায়নি.. সেটা সবাই বেমালুম ভুলে গেল..
আমার পরিচিত:
আমি কাব্য.. কবিতা এবং সাহিত্য ভালোবাসি.. নিজেও কিছু লেখার চেষ্টা করি.. হয়, আবার হয় না..