কুদ্দুস মিয়া বিপদে আছে। বারবার তার চাকরি চলে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ০৭ বার চাকরি চেঞ্জ করেছে। সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না, কেন তার চাকরি থাকে না। তাই কুদ্দুস মিয়া গেল পরামর্শ কেন্দ্রে।
"সবজান্তা শমসের" সাইনবোর্ড দেখে কিছুটা স্বস্তি পেল কুদ্দুস মিয়া। যদি সত্যিই সবজান্তা হয়ে থাকে, তাহলে তার সমস্যার সমাধান অবশ্যই করে দিতে পারবে। কোন চিন্তাভাবনা না করে ঢুকে গেল চেম্বারে।
হালকা পাতলা একটা লোক বসে আছে। কুদ্দুস মিয়াকে দেখেই বসতে বলল। সমস্যা জিজ্ঞাসা করল।
কুদ্দুস মিয়া বলল, স্যার আমার চাকরি টিকে না।
-কেন টিকে না?
-এইডাই তো বুঝি না। এজন্যই আপনার কাছে আসছি।
-সহজ সমাধান। বসের খালি প্রশংসা করবেন। তাহলেই দেখবেন চাকরি টিকে গেছে।
-না স্যার। প্রশংসা করছি। তাও কাম হয় নাই।
-কিরকম?
-কাস্টমসে পিয়নের কাম করতাম। লোকজন বসের রুমে ঢোকার আগে আমারে জিজ্ঞাসা করত: উনি মানুষ কেমন? আমি কইতাম: উনার মত সৎ ব্যক্তি আমি দ্বিতীয়টা জীবনে দেখি নাই।
-ভালো বলেছেন। আপনার বস তো খুশি হওয়ার কথা?
-না স্যার। আমার জন্য নাকি বসের ইনকাম কমে গেছে। লোকজন সৎ মনে করে আর ঘুষের টাকা দিত না। এইজন্য বস আমারে তারাইয়া দিছে।
-আহা! আপনার দেখি কপালটা খারাপ। তো বসের প্রশংসার পাশাপাশি টাকার বিষয়টা একটু বললেই তো হয়।
-বলছি। পরের চাকরিতে সেইটাও বলছি। কাম হয় নাই। আবার চাকরি চল্যা গেছে।
-কেন কেন?
-পরের বার চাকরি নিছি একটা প্রাইভেট ব্যাংকে ম্যানেজারের পিয়ন হিসেবে। একদিন কয়েকজন লোক আইসা জিজ্ঞেস করছে: উনি মানুষ কেমন? আগের বারের থেকে শিক্ষা পাইয়া এবার আমি কইলাম: একদম মাটির মানুষ, কিন্তু টাকা ছাড়া কাম করে না।
-তারপর কি হলো?
-তারপর আর কি। আমার চাকরিটা গেল।
-কেন? এবার তো ঠিকমতোই বলেছেন!
-আমি তো বুঝতে পারি নাই, ওরা হেড অফিস থেকে অডিটের লোকাট আসছিল। প্রথমে বসের সাসপেনশন। পরে বস কেমনে কেমনে জানি ম্যানেজ করে ফেলছে। উনার চাকরিটা বেঁচে গেছে। আর আমার চাকরীটা গেছে।
-আহারে বেচারা। আপনার ভাগ্যটাই খারাপ।
-জি স্যার। এই জন্য আপনার কাছে আসছি। একটা সমাধান দেন। আগামীকাল থেকে নতুন চাকরিতে জয়েন করমু। কি করলে চাকরি টিকব, পরামর্শ দেন।
-এখন থেকে মুখে কোন কথা বলা যাবে না। শুধু মাথা নাড়বেন। বস গালি দিলে মাথা নাড়বেন। প্রশংসা করলেও মাথা নাড়বেন। কেউ এসে কিছু জিজ্ঞাসা করলেও মাথা নাড়বেন। বোবার কোন শত্রু নেই।
-ধন্যবাদ স্যার। অনেক বড় উপকার করছেন।
-ধন্যবাদ লাগবে না। আমার বিলটা দিলেই হবে।
কুদ্দুস মিয়া একটা চকচকে ৫০০ টাকার নোট পকেট থেকে বের করে দিয়ে দিল।
চাকরি ভালই চলছে। একটা কোঅপারেটিভ কোম্পানির ম্যানেজারের পিয়ন হিসেবে চাকরি। সবজান্তা শমসেরের পরামর্শ মত কুদ্দুস মিয়া শুধু মাথা নেড়ে যায়। অফিসে এখন সবাই জানে- কুদ্দুস মিয়াকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। গালি দিয়েও লাভ নেই। সে শুধু হাসে আর মাথা নাড়ে।
কিন্তু কুদ্দুস মিয়ার কপালটা মন্দ। সুখ বেশিদিন সয় না। কোম্পানিটা আসলে ভুয়া ছিল। কো-অপারেটিভের নাম করে মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে একদিন লাপাত্তা।
সকালে অফিস করতে এসে কুদ্দুস মিয়া দেখে অফিস ফাঁকা! কেউ নাই। ততক্ষণে কাস্টমারদের কাছে খবর পৌঁছে গেছে। টাকার জন্য সবাই অফিস ঘেরাও করেছে। অফিসের ভিতরে কুদ্দুস মিয়া একা। ভয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে।
কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসল। জিজ্ঞেস করল: বাদবাকিরা কোথায়?
কুদ্দুস মিয়ার সবজান্তা শমসেরের পরামর্শ মনে পরে। সে কিছু বলে না। শুধু হাসে।
কাস্টমাররা বলে, এরে ধইরা শক্ত একটা ধুনা দেন। তাইলে আসল খবর বাইর হইবো। সেও ওদের সাথে জড়িত।
সবাই তাকায় কুদ্দুস মিয়ার দিকে। সে কিছু বলে না। খালি মাথা নাড়ে আর হাসে।
কুদ্দুস মিয়াকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় প্যাদানি দিয়ে কুদ্দুস মিয়াকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোর সাথে আর কে কে জড়িত আছে?
কুদ্দুস মিয়া মারের চোটে হাঁপাতে হাঁপাতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, সবজান্তা শমসের।
আমি প্রতি রবিবার একটি করে রম্য গল্প লিখছি #bdcommunity - তে। এতে কুদ্দুস মিয়া চরিত্রটির বিভিন্ন হাস্যরসাত্মক কর্মকাণ্ডে বিনোদনের পাশাপাশি স্যাটায়ার হিসেবে সমাজের অনিয়ম তুলে ধরাই আমার লক্ষ্য। সবগুলো লেখায় #sundayfun ট্যাগ ব্যবহার করব, যাতে পাঠকগণ চাইলেই রম্যগল্পগুলি সহজে খুঁজে পান। এই প্রকল্পের আরেকটি গল্প আজ লিখলাম। নির্মল বিনোদনের জন্য আগের গল্পগুলোও চাইলে পড়তে পারেনঃ
...কুদ্দুস মিয়ার ডায়াগনোসিস...
...কুদ্দুস মিয়ার ব্যাংক একাউন্ট...
আত্মকথনঃ
আমি ত্বরিকুল ইসলাম। সখের বশে ব্লগিং করি। ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ে আগ্রহী।
- Hive: My Blog
- LeoFinance: My Leo
- Dtube: My Tube
- 3speak: My Vlog
- Twitter: My Tweet
- FB: My Profile
- Pinmapple: My Tour
- TravelFeed: My Feed
"পড়াশোনায় ইঞ্জিনিয়ার। পেশায় শিক্ষক। নেশায় লেখক। সাবেক ব্যাংকার। পছন্দ করি লিখতে, পড়তে, ভ্রমণ করতে এবং জমিয়ে আড্ডা দিতে।"
জীবনটাকে অনেক অনেক ভালোবাসি